ঢাকাশুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আবহাওয়া
  3. আমাদের পরিবার
  4. আর্ন্তজাতিক
  5. ইসলামী জীবন
  6. এনায়েতপুর
  7. কক্সবাজার
  8. করোনা আপডেট
  9. খেলাধুলা
  10. চাকরি-বাকরি
  11. জাতীয়
  12. নাগরিক সংবাদ
  13. পাঁচমিশালি
  14. বরিশাল বিভাগ
  15. বাংলাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

‘যদ্যপি আমার গুরু’ ও একজন আহমদ ছফা

যুগের কথা ডেস্ক
জুলাই ৭, ২০২০ ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

একজন আহমদ ছফা, যিনি সময়ের স্রোতে পাঠক মহলে নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছেন।তিনি একজন খ্যাতিমান লেখক ও চিন্তক। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, গান, প্রবন্ধ, অনুবাদ, ইতিহাস, ভ্রমণকাহিনিসহ অসংখ্য রচনা করেছেন যাঁর সব মিলিয়ে তিন’শটিরও অধিক। আজও তাঁর পাঠক সংখ্যা কমে না বরং দিন দিন বাড়ে।অগণিত পাঠকের ভীড়ে আমিও তাঁর একজন ক্ষুদে পাঠক। তাঁর লেখা বইগুলোর মধ্যে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটি পাঠ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল বছর খানিক আগে।অবশ্য বইটি উপহার হিশেবে পেয়েছিলাম আমারই একজন সনামধন্য শিক্ষক সুলেমান কবির স্যারের কাছ থেকে। পরে তাঁর বেশির ভাগ বইগুলোই আমি কিনেছিলাম।

৩০ জুন প্রিয় ছফার জন্মদিন।
তাই প্রিয় ছফার জন্মদিনে এ-বইটির পাঠপ্রতিক্রিয়া লেখার ক্ষুদ্র চেষ্টা করেছি মাত্র। ১১০ পৃষ্ঠার ছোট
এ-গ্রন্থটি ধৈর্য সহকারে পাঠ করলে আপনারা জানতে পারবেন একজন ছফা কত বড় মাপের একজন লেখক ও চিন্তক এবং জানতে পারবেন যাকে নিয়ে তিনি বইটি রচনা করেছেন, তিনি আর কেউ নন তাঁরই প্রখ্যাত শিক্ষক জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক কে নিয়ে।
এবং জানতে পারবেন তাঁর দেশ বাংলাকে নিয়ে
তিনি কত ভাবতেন।

সাল তখন উনিশশো সত্তর।বাংলা একাডেমি থেকে তিন বছরের ফেলোশিপ প্রোগামে প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান চেয়ে সংবাদপত্রে একটা বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হলো। ছফা তার বন্ধুবান্ধবদের অনুরোধে বাংলা আবেদন করতে রাজি হলেন।বৃত্তিটা পেয়ে গেলে তিন বছরের নিরাপদ জীবন, সাথে গবেষণা হয়তো হবে, না হলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু সমস্যা হলো তখনও তিনি এমএ পাশ করেননি।স্বাধীনতা আন্দোলনের গতিবেগ তখন ক্রমাগত ফুঁসে উঠেছিল। পরীক্ষা কবে শেষ হবে তার কেনো ঠিক নেই। অন্যদিকে যদি পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় থাকেন তাহলে তিনি আবেদনের সময় পেরিয়ে যাবে।তিনি একাডেমির পরিচালক জনাব কবীর চৌধুরীর সাথে দেখা করে বললেন যে অন্তত তার যেন আবেদনটি গ্রহণ করা হয়। কবীর চৌধুরীর আবেদনটি জমা দেওয়ার কথা বললেন এবং আবেদনটি বোর্ডে তুলার কথা বললেন।
ইন্টারভিউর দিনে ছফা বোর্ডের সামনে হাজির হয়ে দেখতে পেলেন, ড. আহমদ শরীফ, প্রফেসর মুনীর চৌধুরী এবং ড. এনামুন হক। ড.এনামুল হক ছাড়া সবাই তার শিক্ষক। প্রশ্ন যা করার এনামুল সাহেবেই করেছেন।খুব রাশভারি মানুষ তিনি।আস্তা একটা ক্ষুধার্ত বুড়ো বাঘের মত।
আবেদনটি হাতে নেওয়ার পর এনামুল হক বলে উঠলেন, “তোমার সাহস তো কম নয় হে, এমএ পরীক্ষা না দিয়েই পিএইচডি করার দরখাস্ত নিয়ে হাজির” মোটা মোটা চোখ দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছেন এনামুল। তখনই ছফা প্রতিবাদী মনোভাব নিয়ে চিন্তা করেন, “এই বড়োর সামনে যদি আমি রুখে না দাঁড়াই, তিনি আমার চোখের পানি নাকের পানি এক করে ছাড়বেন।”
তাই তিনি সরাসরি বলে ফেললেন, “চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এমএ পাশ না করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মোহিতলাল মজুমদারও এমএ পাশ ছিলেন না,তথাপি এখানে শিক্ষকতা করেছেন।আমি তো এমএ পাশ করবোই, দু’চার মাস এদিক ওদিক। দরখাস্ত করে অন্যায় কী করেছি? তার কথাগুলো শুনে এনামুল হক একটু ক্ষীণ হলেন। আর বললেন, ‘তুমি কোন বিষয়ের ওপর কাজ করবে? ছফা উত্তর দিলেন, “আঠারোশো থেকে আঠারোশো আটান্ন সাল পর্যন্ত বাংলায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব,বিকাশ এবং বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতি এবং রাজনীতিতে তার প্রভাব।” তখন ড. হক বললেন, “তুমি মধ্যবিত্ত বলতে কী বোঝো সে বিষয়ে কিছু বলো” নির্বিঘ্নে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন।
বইটিতে ছফা বেদনাদায়ক মনে উল্লেখ করেন, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম এবং তিন বছর পড়াশুনা করেছি।মাতৃস্তন্যে শিশুর যেরকম অধিকার,শিক্ষকদের স্নেহের ওপরও ছাত্রদের সেরকম অধিকার থাকা উচিত। সেই স্নেহ আমি শিক্ষকদের কাছ থেকে পাইনি। শিক্ষকদের কাছ থেকে সামান্য উৎসাহ অনুপ্রেরণা যখন আমার ভীষণ প্রয়োজন ছিলো,সেই সময় কেউ আমার দিকে মুখ তুলে তাকাননি।তখন আমি নিজের চেষ্টায় উঠে আসতে শুরু করেছি“ তাতেই প্রমাণিত হয় তিনি একজন সাহসী ও তেজস্বী লেখক ও মানুষ।
ছফা তার বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে একজন জ্ঞানী শিক্ষকের নাম জানতে চেয়েছিলেন, যাকে তার পিএইচডি থিসিসটির পরামর্শক হিশেবে যাকে বেছে নিতে পারেন।সকলে তাকে পরামর্শ দিলেন “তুমি আবদুর রাজ্জাক স্যারের কাছে যাও,তাঁর মত পণ্ডিত আর নেই”। তিনি স্থির করলেন রাজ্জাক সাহেরে বাড়ি গিয়ে পিএইচডির থিসিসের সুপারভাইজার হবার অনুরোধ করবেন।কিন্তু তার বন্ধুবান্ধবরা আগাম বলে রাখলেন, “রাজ্জাক সাহেন ভীষণ নাকউঁচু মানুষ, বাঘা বাঘা লোকেরাও তার কাছে ঘেঁষতে ভীষণ ভয় করেন। সুতরাং কথাবার্তা সাবধানে বলবে”।
ছফা অনেক দ্বিধা, অনেক শঙ্কা এবং সঙ্কোচ নিয়ে রাজ্জাক সাহেবের বাসায় গেলেন। তার রুম দেখে ইতস্তত হয়ে পড়েন,চার দিকে বই আর বই, বিশেষ করে পুরনো বইয়ের গন্ধ তাকে মুগ্ধ করেছিল।এই ঘরে যে কোনো মানুষ আছে তিনি প্রথমে খেয়ালই করেন নি। হটাৎ লক্ষ করেন চৌকির পাতলা কাঁথা নাক অবধি পড়ে ঘুমুচ্ছিলেন।ঘরে যে দ্বিতীয় কেনো পারসন ঢুকলো সেটিই তিনি বোঝে গেলেন আর বললেন,কেডা?
তিনি চৌকির একেবারে কাছে গিয়ে সালাম দিলেন এবং নাম বললেন।শুরু হলো আবদুল রাজ্জাক আর ছফার মজার কথোপকথন । রাজ্জাক সাহেব বললেন, “আইছেন ক্যান আগে হেইডা কন?” ছফা বিনম্রস্বরে বলেন, “বাংলা একাডেমি আমাকে পিএইচডি করার জন্য একটা বৃত্তি দিয়েছে। আমি তার কাছে এসেছি একটা বিশেষ অনুরোধ নিয়ে,তিনি যেনো দয়া করে আমার গবেষণার পরামর্শক হন।তাতে সামান্যতম প্রতিক্রিয়াও লক্ষ করলেন না।অথচ তিনি নাকমুখ ডেকে ঘুম ধরালেন।
তিনি আবার বললেন, স্যার, আপনাকে আমার থিসিসের সুপারভাইজার হওয়ার জন্য দ্বিতীয় বার অনুরোধ করছি, মর্জি যেন মঞ্জুর হয়। কাজ হলো না। ছফা নিজেকে লজ্জিত বোধ করলেন এবং তার কাছে খুব খারাপ লাগছিল।এত খারাপ লাগছিল।তিনি অপমানিত হওয়ার কারণে,বইয়ের গুদামে আগুন লাগিয়ো দিতে চাইলেন। কিন্তু সেটা তো মোটেই ভালো কাজ নয়। তবে তার ঝাঁজ তো মিটাতে হবে।ছফা তখন দুই হাত দিয়ে তার শরীর থেকে কাঁথাটি টেনে নিয়ে বললেন,আমার মতো একজন আগ্রহী যুবককে একটি কথা না বলেই তাড়িয়ে দিতে পারেন,এত বিদ্যা নিয়ে কি করবেন? তখন বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো তিনি চৌকির ওপর উঠে বসলেন।পরনে সাদা আধময়লা লুঙ্গিটা গিট

দিলেন।অতঃপর বললেন, “ওইহানে বয়েন” তারপর শুরু হয় ছফা সাহের থিসিস নিয়ে কথা। রাজ্জাক সাহেবের তিন জিনিস ছফাকে মুগ্ধ করেছিল(১) তার চোখের দৃষ্টি অসাধারণ তীক্ষ্ণ (২) ঢাকাইয়া বুলির অবলীলায় ব্যবহার করেন,যে শুনেছে কেবল সেই বোঝতে পারবে কতটুকু মিষ্টি,(৩) কেন তাকে মৌলবি আহমদ ছফা বলে সম্বোধন করতেন।
উনিশশো বাহাত্তর সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্জাক সাহেবের সাথে দেখা করতে গেলেন, এসময় তিনি বাড়ি বদল করেছেন।শুধু বাড়ি বদলই নয় পরিবর্তন ঘটেছে অনেক কিছুর।সে সময় রাজ্জাক সাহেব রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব পালন করতে আরম্ভ করছেন জাতীয় অধ্যাপকও বানানো হয়েছে। পূর্বতন চেয়ারম্যান ড. মোজাফফর চৌধুরী উপাচার্য পদে আসীন হয়েছেন।মোজাফফর সাহেব ছিলেন প্রফেসর রাজ্জাক সাহেবের একান্ত স্নেহভাজন ছাত্র।
ছফা বসে রইলেন, এমতাবস্থায় একটি বাচ্চা দুকাপ চা এনে দিল,রাজ্জাক সাহেব চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিলেন আর বললেন,“ মৌলবি আহমদ ছফা চা খান” চুমক দিতে দিতে বললেন, “ সবসময় লেবু দিয়া চা খাইবেন ইত্যাদি। এসময় কথা উঠলো জসীমুদ্দীনের। তিনি ‘স’ এর উচ্চারণ ‘ছ’ এর করতেন।ছফা জিগ্যেস করলেন সম্পর্কে কিছু বলেন।রাজ্জাক সাহেব বললেন, “ একসময় কলকাতায় আমি এবং জসীমুদ্দীন এক বাড়িতে থাকতাম। একদিন জসীমুদ্দীন আমাকে কাপড়চোপড় পইড়া তারাতাড়ি তৈয়ার অইবার তাগদা দিতে লাগলেন। আমি জিগাইলাম, কই যাইবার চান। জসীমুদ্দীন কইলেন, এক জায়গা যাওন লাগব।কাপড়চোপর পইড়া তাঁর লগে হাঁইট্যা হাঁইট্যা যখন এ্যাসপ্ল্যানেডে আইলাম, জসীমুদ্দীন ঘাড় চুলকাইকা কইলেন,কও দেখি এখন কই যাওন যায়? এরকম কাণ্ড অনেকবার ওইছে।একটুখানি হাসলেন।” এসময় জসীমুদ্দীনের প্রসঙ্গে ধরে কবি মোহিতলালের কথা উঠলো।কবি জসীমুদ্দীনের একটি কবিতার বইয়ের নাম ছিল ধান ক্ষেত। মোহিতলাল তাকে ঠাট্টা ও রসিকতা করে বলতেন, “জসীমুদ্দীন ধান ক্ষেত” রজ্জাক সাহেব মোহিতলাল কে চ্যাালেঞ্জ করে বললেন, “আপনে জসীমুদ্দীনের এর ঠাট্টা করেন ক্যান। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে জসীমুদ্দীনের একটা অধ্যায় লেখা অয়,আপনেরে নিয়া লেখব মাত্র চাইর লাইন।” ঐ সময়ে আলোচনার একটা পর্যায়ে আসলো নজরুলের কথা,তিনি নজরুলকে খুব ভালবাসতেন, একবার নজরুলকে ঢাকার জলসায় তিনি গান গাইতে দেখেছেন।রাজ্জাক আর জসীমুদ্দীন যে বাড়িতে থাকতেন,সে জায়গাটা কাননবালার বাড়ির খুব কাছাকাছি ছিল।কাননের বাড়িতে নজরুল ইসলাম পড়ে থাকতেন। উস্তাদ জসীমুদ্দীন এবং কাজী নজরুল মিলে সুরের নানার রকম পরীক্ষানিরীক্ষা করতেন।
আসলে একজন শিক্ষক ও ছাত্রের রসায়ন কত মধুর হতে পারে,কত বন্ধুর হতে পারে আবার সেই বন্ধুত্বের মধ্যে কখন টেনে দিতে শ্রদ্ধার বিরামচিহ্ন তা কেবল ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটি পাঠ করলেই বুঝা যায়।
এই বইটি শিক্ষক ও ছাত্রের সম্পর্ক কেমন হবে
তার এক সুন্দর অবয়ব টেনেছেন ছফা।তুলে এনেছেন
তৎকালীন সমসাময়িক চিত্রকেও।
ছফা বলতেন,”একজন মৌলবাদী শতভাগ শতভাগ
মৌলবাদী, কিন্তু যারা নিজেদের প্রগতিশীল বলে
দাবী করেন তাদের কেউ কেউ দশ ভাগ প্রগতিশীল,
পঞ্চাশ ভাগ সুবিধাবাদী,পনেরো ভাগ কাপুরুষ
আর পাঁচ ভাগ একেবারে জড়বুদ্ধিসম্পর্ন।”
ত্রিশ জুন ছফার জন্মদিন।
অনেকটা নিরবেই চলে গেলো প্রিয় এই দার্শনিকের জন্মদিন।যদিও বাংলার মাটি ও বাংলার জল
চিরদিন স্মরণ করবে প্রিয় ছফাকে,প্রিয় বসকে
পরম্পরায়।
লেখক: মাছুম আহমদ

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।