মানিকগঞ্জ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় থাকা তিন শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকারদেরকে গত বছরের ১৯ মার্চ উচ্ছেদ করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্র্তৃপক্ষ। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অব্যবহূত জায়গায় টং তুলে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ছিন্নমূল হকাররা। উচ্ছেদের কারণে উপার্জনের অবলম্বন হারিয়ে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উচ্ছেদকৃত জায়গায় অস্থায়ীভাবে বাঁশ, পলিথিন দিয়ে ৩০/৩৫ জন হকার ঘর বানিয়ে চা,পান, বিড়ি-সিগারেট, ডিম, চানাচুর, ঝালমুড়ি, বিভিন্ন ধরণের ফল বিক্রির ব্যবসা করতে দেখা গেছে। উচ্ছেদের পর থেকেই নিদারুন কষ্টে দিন যাপন করছে হকার্স মার্কেটের তিন শতাধিক হকার ও ক্ষুদ্রব্যবসায়ীরা। আয় রোজগার না থাকায় পরিবার নিয়ে প্রায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ থেকে মানিকগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, পৌর হকার মার্কেট, কাঁচাবাজার আড়ত মার্কেট, ট্রাফিক পুলিশ মার্কেট ও পৌর আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ তিন শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হয়। এছাড়া মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড,গোলড়া, বানিয়াজুরী, মহাদেবপুর, বরঙ্গাইল, পাটুরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় দুই হাজার অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে উচ্ছেদের কাজ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
মানিকগঞ্জ হকার্স সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৯ মার্চ ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক প্রশস্থকরণের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ তাদেরকে উচ্ছেদ করে। তাদেও দাবি তারা নিয়ম মেনেই পৌরসভাকে প্রতিটি দোকানের পজিশন ফি হিসাবে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিল। নিজেদের টাকা দিয়েই দোকান ঘর নির্মাণ করেছিল। এজন্য প্রতিটি দোকান ঘর নির্মাণ করতে খরচ হয়েছিল প্রায় ৪০ হাজার টাকা। চারশ টাকা করে মাসিক ভাড়াও দিতেন তিন শতাধিক হকার ও ক্ষুদ্রব্যবসায়ীরা।
জেলা হকার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, আমরা প্রথমে রাস্তার দু’পাশের ফুটপাতে দোকান করতাম। পরে পৌরসভা আমাদের ফুটপাত থেকে মার্কেটে বসিয়ে দেয়। পৌরসভাকে প্রথমে ২০০ টাকা পরে ৪০০ টাকা করে ভাড়া দিতাম। ট্রেড লাইসেন্স ও পৌরকরও নিয়মিত দিয়ে আসছি। উচ্ছেদের পর থেকেই আমরা উপার্জনের অবলম্বন হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। একেতো ঘর নাই তার পর করোনাভাইরাসের কারণে আমরা একেবারেই শেষ হয়ে গেছি।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: গাউস উল হাসান মারুফ জানান, সড়ক ও জনপথের জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত ও রাস্তা সম্প্রসারণের জন্যই তাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। তাদেরকে পুর্নবাসনের জন্য জেলা প্রশাসন আইন ও বিধি মোতাবেক যে সিদ্ধান্ত নিবেন আমরা সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবো।
জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস জানান, সুবিধাজনক কোনো জায়গা পাওয়া গেলে তাদের পুনর্বাসন করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র বরাবর পুর্নবাসনের জন্য অনুলিপি প্রদান করেছে জেলা হকার্স সমিতি। তিন শতাধিক হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পরিবার-পরিজনের কথা বিবেচনা করে পৌর এলাকায় সরকারি পরিত্যক্ত জমিতে প্রশাসনের তত্তাবধানে মার্কেট নির্মাণ করে তাদের পুনর্বাসন করার দাবি জেলা হকার্স সমিতি।