ঢাকাবুধবার , ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আবহাওয়া
  3. আমাদের পরিবার
  4. আর্ন্তজাতিক
  5. ইসলামী জীবন
  6. এনায়েতপুর
  7. কক্সবাজার
  8. করোনা আপডেট
  9. খেলাধুলা
  10. চাকরি-বাকরি
  11. জাতীয়
  12. নাগরিক সংবাদ
  13. পাঁচমিশালি
  14. বরিশাল বিভাগ
  15. বাংলাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শিক্ষকের বেত্রাঘাতে ভাঙ্গা হাত নিয়ে ৭ মাস ধরে ঘুরছেন এতিম শিশু ইলিয়াছ

গোলাম মোস্তফা রুবেল
ডিসেম্বর ২, ২০২১ ৯:১০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

শিক্ষকের বেতাঘাতে ৭ মাস ধরে হাত ভাঙ্গা নিয়ে ঘুরছেন এতিম ছাত্র ইলিয়াছ রহমান (১০)। তিনি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৮নং কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বড় কয়ড়া (সয়াসেখা) গ্রামের নূর হোসেন পুত্র। সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে অর্থপেডিক্স বিভাগে ২নং বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অশ্র“ ছল ছল চোখে ভাঙ্গা কণ্ঠে শিশু ইলিয়াছ রহমান মুল ঘটনা গুলো বর্ণনা করেন।
‘জন্মের একবছর পর মা অজুফা খাতুন মৃত্যুবরণ করায় বাবা নুর হোসেন অন্যত্র বিবাহ করলে পারিবারিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে দিলে খোজ রাখেনা কেউ তার। শেষ ঠাঁই হলো খালা রোজিনার বাড়ী। খালা রোজিনার আর্থিক অবস্থাও করুণ হওয়ায় আমাকে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য কালিয়াহরিপুর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়া কবরস্থান মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। শিশু বয়সের উদ্দীপনায় আজ থেকে প্রায় ৭ মাস পূর্বে ৬ জুন বিকেলে অন্য ছাত্রের সাথে মাঠে খেলাধুলা করতে থাকেন ইলিয়াছ। মাদ্রাসার শিশুরা খেলাধুলা করার সময় মাঠে থাকা ধানের খড় এলোমেলো হয়ে যায়। এই এলোমেলোই কাল হল ইলিয়াছ রহমানের।’
মাদ্রাসার হুজুর আবুল কালাম আজাদ এসে খড় এলোমেলো দেখে রাগান্বিতভাবে সকল শিশুকে জিজ্ঞাসা করে কে এই খড় এলোমেলো করেছে। যে ছাত্র এলোমেলো করেছে সেই ছাত্র বাঁচার জন্য ইলিয়াছ রহমানের নাম বলে দেওয়ার সাথে সাথে হুজুর ইলিয়াছ রহমানকে বেধরক বেত্রাঘাত দিয়ে এলোমেলো ভাবে পিটাতে থাকে। পিটানোর এক পর্যায়ে ইলিয়াছ রহমান অজ্ঞান হয়ে পড়ে। অজ্ঞান থেকে জ্ঞান ফিরে এসে দেখে তার হাতে ব্যাপক ব্যথা অনুভব হচ্ছে এবং হাত নড়াচড়া করতে পারছে না। হাত ভাঙ্গার বিষয়টি হুজুর বুঝতে পেরে ইলিয়াছ রহমানকে ৭দিন ঐ মাদ্রাসায় গোপন কক্ষে আটক করে রাখে। হাফিজুর রহমান নামে আরেক হুজুর ছুটি শেষে ৭দিন পর মাদ্রাসায় এলে বিষয়টি বুঝতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা করার জন্য ইলিয়াছকে আভিসিনা হসপিটালে নিয়ে যায়। পরীক্ষা নিরীক্ষার করার পর দেখা যায় ইলিয়াছের হাড়ে ব্যাপক আঘাত পাওয়ায় হাড় নষ্ট হয়ে গেছে। পরবর্তীতে মোবাইলের মাধ্যমে খালার নিকট খবর পৌছে দিয়ে ইলিয়াছ রহমানকে ছুটি দিয়ে দেয়। খালা তাৎক্ষণিকভাবে নর্থবেঙ্গলে চিকিৎসা করালেও টাকার অভাবে উন্নতমানের চিকিৎসা করাতে পারেনি।
দীর্ঘ ৭ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর ২৪ নভেম্বর হাড় ইনফেকশন দেখা দেওয়ায় হাতের মাংস পেশী দিয়ে পুজ বের হচ্ছে। পুজ বের হওয়ায় সাথে সাথে ইলিয়াছের খালা সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। ইলিয়াছ রহমান এখন হাসপাতালে অর্থপেডিক্স বিভাগে ২নং বেডে চিকিৎসাধীন আছে। দিনে একবার খালা আসলেও এই ১০ বছরের শিশুর সাথে কেউ থাকছে না। পাশের বেডের লোকজনই এই শিশুকে দেখভাল করছে।
সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: নুরুল ইসলাম জানান, বেত্রাঘাতে হাড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হওয়ায় হাড় ইনফেকশন করেছে। সেখান থেকে পূজ বের হওয়ার জন্য মাংসপেশীতে ফুটো হয়েছে। খুব দ্রুত উন্নতমানের অপারেশনের মাধ্যমে হাড় চেচে দিতে হবে। চেচে দেওয়ার পরও যদি এই হাড়ে হালকা অথবা ভারী আঘাত পেলে আবার হাড় কাচের মত চুরমার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দ্রুত এর উন্নত চিকিৎসা করাতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সকল ধরনের উন্নত চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ইলিয়াছের খালা রোজিনা খাতুন বলেন, দু:খের বিষয় আমার এই ইতিম ভাগনেকে দেখার মত বা আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য কেউ নেই। আজ ৯দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রেখেছি ওর বাবা একবারের জন্যও দেখতে আসেনি। কিভাবে ওকে আমি চিকিৎসা করাবো। তাই যদি কোন সহৃদয় ব্যক্তি এই ইতিম শিশুটি পাশে দাড়ান অবশ্যই শিশু উন্নতমানের অপারেশন পেয়ে আবার স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। আর হুজুরের বেত্রাঘাতের পর আমরা কোন মামলা টামলায় যাইনি। যেখানে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছিনা সেখানে কিভাবে মামলা করবো।
সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি আজকেই আপনাদের মাধ্যেমে জানতে পারলাম যে শিশুটি এতিম। আমি ওর চিকিৎসার ব্যাপারে খোজ খবর রাখছি। ওর সকল চিকিৎসা আমি করবো।
মৌলভীপাড়া কবরস্থান মাদ্রাসার শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি আসলে ওকে ওইভাবে মারধর করিনি। তবে আমি ইলিয়াছকে দুটি বেতের বারি দিয়েছি। ওর চিকিৎসার জন্য আমি ও মাদ্রাসা কমিটি টাকা দিয়েছি। আসলেই মারাটা আমার ভুল হয়েছে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।