সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে গত ২৮ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ হলেও এখনো চলছে হামলা পাল্টা হামলা। মামলাও হয়েছে হাফ ডজন। আতংকে রয়েছে গ্রামবাসী। তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ২ নং রাজাপুর ইউনিয়ন ৯ নং ওয়ার্ডের নির্বাচনের দিন ভোট গণনা শেষে মোরগ প্রতীকে সাইফুল ইসলামকে ১২ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
এসময় বিজয়ী প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ও তাঁর লোকজন পরিকল্পনা অনুযায়ী ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ফুটবল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী মুকুল হোসেনের কর্মী সমর্থকের উপর হামলা চালায়। এসময় তারা সংখ্যালঘুদের বাড়িতেও ব্যাপক ভাঙচুর করেন। হামলাকারীদের আঘাতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। তাদের মধ্য কয়েকজনকে সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ায় ভর্তি করা হয়। নির্বাচনের পরের দিন অর্থাৎ ২৯ তারিখ দুপুরে দিকে আবারও সাইফুল মেম্বর গং সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ভাংচুরের চেষ্টা করতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এসময় বেলকুচি থানার ওসি সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর পরিদর্শন করেন এবং তাদেরকে আস্বস্ত করেন কেউ কিছু বললে তাকে যেন জানান। সেই সাথে হামলা কারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর হুসিয়ারি দিয়ে যান।
নির্বাচনের দিন হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় ২৯ শে নভেম্বর আহত নুর মোহাম্মদ শেখের ছেলে বাবু বাদী হয়ে সাইফুল মেম্বর সহ ২২ জনকে আসামি করে বেলকুচি থানায় একটি মামলার আবেদন করে। কিন্তু পুলিশ মামলা না নিয়ে সময় ক্ষেপণ করেন, একপর্যায়ে অভিযুক্তদের আড়াল আর বাদী পক্ষকেই হয়রানি শুরু করেন পুলিশ।
এ বিষয়ে প্রার্থী মুকুল হোসেন বলেন,আমরা মামলা করার বিষয়ে অটল থাকার কারণে পুলিশের যোগসাজশে আসামি সাইফুল মেম্বর গং আমার সমর্থকদের ফাঁসাতে সাইফুল মেম্বর বাদী হয়ে আমি সহ ৩০ জনকে আসামি করে বেলকুচি থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এজন্য সাইফুল মেম্বরের ভাই, ভাতিজা সহ ৪ জনের মাথা ব্লেড দিয়ে কেটে হাসপাতালে ভর্তি করে সার্টিফিকেট তোলেন। যেখানে তারা উল্লেখ করেছে ২৯ তারিখ সকাল ১০ ঘটিকার সময় মুকুলের লোকজন তাদেরকে মারধর করে মাথা ফাটিয়েছে। কিন্তু ২৯ তারিখ সকালে কোন মারামারি হয় নাই বরং তারাই হিন্দুদের বাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা করেছে। তার স্বাক্ষী বেলকুচি থানার ওসি নিজেই। কেননা সে সময় তিনি নাগগাঁতী উপস্থিত ছিলেন। ঐ দিন কোন মারামারি হয় নাই সেটা পরিস্কার জেনেও বেলকুচি থানায় মিথ্যা মামলা করেন কিভাবে এটাই আমাদের প্রশ্ন।
পরবর্তীতে বাবু শেখ এবং সাইফুল মেম্বর দুজনের মামলা থানা গ্রহণ করলেও আমরা বাড়ি ছাড়া হলেও সাইফুল মেম্বর সব সময় থানায় গিয়ে বসে থাকে।
তিনি আরো বলেন, ৩০ তারিখে আদালতে করা সে মামলা আজ পর্যন্ত রেকর্ড করেন নাই। থানা কর্তৃপক্ষ আসামী পক্ষে প্রভাবিত হয়ে মামলাটি রেকর্ড না করে আমাদের হয়রানি করছেন। প্রতিনিয়ত সাইফুল মেম্বর সহ তাদের পক্ষ থেকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে মামলা প্রত্যাহার না করলে তারা আমাদের বিরুদ্ধে আরও মিথ্যা মামলা দায়ের করবে। করছেও ঠিক তাই গতকাল ১৩ ডিসেম্বর সাইফুল মেম্বরের ভাই আলতাফ হোসেন ও জাকির বাদী হয়ে আরও দুটি মামলা করেছেন আদালতে। সাজানো এজাহার মিথ্যা ঘটনায়র মামলায় ভুক্তভোগী পরিবারের আহত ব্যক্তিরাসহ ৬০ জনকে আসামি করা হয়।
তিনি আরো বলেন, সাইফুল মেম্বর গং ও তার পক্ষের লোকজন মিথ্যা ও বানোয়াট ঘটনা সৃষ্টি করে থানায় এবং আদালতে একের পর এক মিথ্যা মামলা ও বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে এবং থানা পুলিশকে দিয়েও হয়রানি করছে। আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি। এজন্য প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং ষড়যন্ত্রমূলক ও মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তির আশা করছি।
এব্যাপারে মেস্বর সাইফুল ইসলাম বলেন, ওরা পরাজিত হয়ে আমার উপর ও আমার লোকজনের উপর বারবার হামলা করেছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা করিনি বরং তারাই আমার বিরুদ্ধে মামলা হরেছে। আর তারা যে সকল নিরিহ লোক জনকে মারধর করেছে তারাই বাদী হয়ে মামলা করেছে।
এব্যাপারে বেলকুচি থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা বলেন, নির্বাচনের দিন রাতে পরে দিন যে সকল মারামারি হয়েছে আমি নিজে গিয়ে সেই মারামারি নিয়ন্ত্রন করেছি। যে যে অভিযোগ দিয়েছি সকল অভিযোগ গ্রহন করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমার এখানে এখন কোন মারামারি নেই। কেউ মিথ্যা অভিযোগ কিংবা মারামারি করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।