বিশেষ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল-২ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহন ও ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির দাবি আবারো জোরালো হচ্ছে। উৎকন্ঠায় থাকা যমুনা পাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকগন পাওনা পরিশোধের দাবিতে সম্প্রতি আবারো আন্দোলন করেছেন। ভূমি অধিগ্রহন ও ক্ষতিপূরণের বিষয় নিস্পত্তি না করেই প্রকল্প অঞ্চলে ৫’শতাধিক কোটি টাকা ব্যায়ে পাউবোর ‘তীর রক্ষা বাঁধের’ কাজও চলমান রয়েছে। এর আগে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দিয়ে আরো প্রায় ৫’শ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রকল্পে বালি ভরাট কাজ করা হয়েছে। যে কারনে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে চরম হতাশা ও উৎকন্ঠা বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে জরুরী ভিত্তিতে বিষয়টি দ্রুত নিস্পত্তির দাবিও ক্ষতিগ্রস্তদের।
পাউবো ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল-২’ নামে সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে গত ৪ বছর আগে আরেকটি শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার উদ্দ্যোগ নেয় সরকার। যমুনার ডানতীরে পাউবোর পুনরুদ্ধারকৃত প্রায় এগারশ’ একর জমিতে এর কার্যক্রম শুরু হয়। পুনরুদ্ধারকৃত জমির বেশীরভাগ অংশই আরএস রেকর্ডে ব্যাক্তি মালিকাধীন। যমুনার ক্রমাগত ভাঙ্গনে
আগে এসব জমির প্রায় সবই নদী গর্ভে বিলীন ছিল। ৫বছর আগে পাউবো থেকে বালি ভরাটে পুনরুদ্ধার করায় ব্যাক্তি মালিকাধীন ওইসব জমির দাবিদারও বাড়ছে।
প্রস্তাবিত ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল-২’প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম ৪বছর আগে শুরু হলেও ব্যাক্তি মালিকাধীন ওইসব জমি অধিগ্রহন ও ক্ষতিপূরণের বিষয়টি শুরু থেকেই পেছনে রাখা হয়। যেকারনে শুরু থেকেই হতাশায় পড়েন মালিকগন।
সদর উপজেলার মালসাপাড়ায় পাউবোর ক্রসবার-৩ ও ক্রসবার-৪’র মধ্যবর্তী স্থানে গত ২০১৮ সালে প্রকল্পটি শুরু করা হয়। প্রকল্প শুরুর আগে একনেক সভায় এর প্রাথমিক অনুমোদনও হয়েছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে যমুনার খনন কাজের বালি দিয়ে ডানতীরে পুনরুদ্ধার করা প্রায় এগারশ’ একর জমি। প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রায় এগার’শ একর জমির মধ্যে ৬’শ একর জমিই ব্যাক্তি মালিকাধীন।
অন্যদিকে, পাওনা পরিশোধের দাবিতে ভূমি মালিকগন বিগত বছরে কয়েকদফা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। একই দাবিতে জেলা সদরের মালসাপাড়ায় গত মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারী) মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশসহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন যমুনা পাড়ের আটটি মৌজার ক্ষতিগ্রস্ত মালিকগন।
ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের দাবি আদায় আন্দোলনের আহবায়ক এস.এস. মজুনর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানই এখনও চুড়ান্ত হয়নি। অথচ পাউবো থেকে হাজারো কোটি টাকা ব্যায়ে নিচু স্থান ভরাট ও নদী রক্ষা কাজ চলমান রয়েছে। সরকারী উন্নয়নের বিপক্ষে নই। কিন্তু আমাদের ৮টি মৌজার প্রায় ৬’শ একর জমি অধিগ্রহন বা ক্ষতিপূরণের বিষয়টি এখনও নিস্পত্তি হয়নি।
জেলা কৃষকলীগ সেক্রেটারী মনিরুজ্জামান মনি সমকালকে বলেন, ‘পাওনা না পেয়ে আন্দোলন করেছেন বঞ্ছিতরা। প্রশাসন ও পাউবোর পেছনেও গত ৪ বছর ধরে হণ্যে হয়ে ঘুরছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ক্ষতিপুরণের বিষয়টি দ্রুত সুরাহার দাবি আমাদেরও।
জেলা স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা নব কুমার কর্মকার বলেন, ‘ মালিকগনও হতাশায় আছেন। ক্ষতিপূরন কার্যক্রম দেরী হলেও ভূমি মালিকদের প্রতিশ্রুতি পত্র তো দেয়া যেতে পারে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মুখ্য সচিব, পানি সম্পদ সচিব ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প (বিসিক) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)’র সাথে আলোচনা হচ্ছে। জমি অধিগ্রহন ও ক্ষতিপূরণের বিষয় দ্রুতই নিস্পত্তি হতে পারে। উর্ধ্বতনের নির্দেশেই ভরাট ও প্রতিরক্ষার কাজ চলছে।
জেলা প্রশাসক ড.ফারুক আহাম্মদ বলেন,‘প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্যাক্তিমালিকাধীন, খাস ক্ষতিয়ান ভুক্ত, নদী সিকস্তি, রেলওয়ে ও পাউবোর জমিও রয়েছে। ১০৮১ দশমিক ৭০ একর জমির মধ্যে প্রায় ৫৮৪ দশমিক ৯৪ ভাগ জমিই ব্যাক্তি মালিকাধীন। ব্যাক্তি মালিকাধীন জমি অধিগ্রহন ও ক্ষতিপূরণের জন্য তালিকা প্রনয়নসহ সংশ্লিষ্ট প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। পাউবোর মাধ্যমে পুনরুদ্ধারকৃত জমিতে শুরু করা প্রকল্পটি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প (বিসিক) নিবে, নাকি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ
(বেজা) নিবে, সেটিও চুড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি চুড়ান্ত ও ডিপিপি অনুমোদন পেলে ভূমি অধিগ্রহন ও ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিস্পত্তি হবে।