হুমায়ুন কবির সুমন :
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পলি জমে যমুনায় ধুধু বালু চরে পরিনত হয়েছে। ভরা মৌসুমে যেখানে পানির কলতানীতে মূখরিত ছিল। আজ সেখানেই বালু চরে ধুধু করছে। পাখীরা ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে। বালু চরে বেড়েছে ভ্রমণপিপাসুদের পদচারনা।
সিরাজগঞ্জে দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদীতে সময়মত ড্রেজিং এবং খনন না করায় কোন কোন জায়গায় নালায় পরিণত হয়েছে। ফলে নদীর বুকজুড়ে জেগে উঠেছে হাজার হাজার একর আবাদি জমি। শুধু তাই নয় নদীর বুকে পলি পড়ায় বিপাকে পড়েছে নৌযান।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার চৌহালী, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, বেলকুচি কাজিপুরের মাইজবাড়ী, খাসরাজবাড়ী, নাটুয়ারপাড়া, মনসুরনগর, চরগিরিশ ও নিশ্চিন্তপুরের উপর দিয়ে বয়ে চলা রাক্ষুসী যমুনা নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদীর বুকজুড়ে জেগে উঠেছে হাজার হাজার একর আবাদি জমি। জমির মালিকরা জেগে ওঠা বালুর চরে বাদাম, কালাই, সরিষা, ভুট্রাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করছে। অপর দিকে পানি কমে যাওয়ার নৌ-শ্রমিক এবং মাছ ধরার জেলারা বেকার হয়ে পড়েছেন।
এবিষয়ে কথা হয় চৌহালী উপজেলার ঘোরজান এলাকার কৃষক আনছার আলীর সাথে তিনি বলেন, শীত আসলেই নদীর বুকজুড়ে জেগে উঠে হাজার হাজার একর আবাদি জমি। জেগে ওঠা জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করি। আর বর্ষা মৌসুমে পানি পরিপূর্ন থাকে তখন জমিজমার কোন হদিস থাকে না।
একই এলাকার কৃষক মোস্তফা বলেন, বর্ষা মৌসুমে পানির সাথে যুদ্ধ করে চলি। তবুও যোগাযোগের ব্যবস্থা ভাল তাকে। এখন যমুনা মরাখালে পরিনত হয়েছে। জেগে উঠেছে অসংখ্য জমিজমা। চাষাবাদ হলেও যোগাযোগের ব্যবস্থা খুব খারাপ।
তিনি আরও বলেন, এবার যমুনার বুকে জেগে উঠেছে ৯ বিঘা জমি। সেখানে সরিষার আবাদ করেছি। আবাদ বেশ ভাল হয়েছে।
কাজিপুরের নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের জেলে পরিমল দাস বলেন, এখন খরার মৌসুম, পানি নেই নদীতে। উজান থেকে নেমে আসা বালুতে নদী ভরাট হয়ে গেছে। এখন আর জাল ফেলে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রিক্সা ভ্যান চালিয়ে কোন রকম সংসার চালাই। ভরা মৌসুমে আবার মাছ ধরায় নেমে পড়ব।
তিনি আরও বলেন, ভরা মৌসুম অর্থাৎ বছরে ছয় মাস রিক্সা-ভ্যান চালাই আর ছয় মাস শাছ ধরি।
মেঘাই নৌ-ঘাটের শ্রমিক বাদশা ও হাসান আলী বলেন, বিশ বছর আগে থেকে মেঘাই ঘাটে শ্রমিকের কাজ শুরু করি, আজও করছি। শীতকালে যমুনা নদী এখন বিভিন্ন শাখা এবং নালায় পরিণত হয়েছে। এখন নৌকা ঠিকমত ঘাটে আসতে পারেনা। আমাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই অন্য পেশায় যাওয়ার চিন্তা করছি।
চৌহালীর সদরের নৌকা ঘাটের ইজারাদার নায়েব আলী জানান, শীতের শুরু থেকে পানি কমতে থাকে। এখনতো খরার মৌসুম নদী বুকে বালুর চরে ভরে গেছে। ঘাটে আর নেীকা আসতে পারে না। ঘাট থেকে প্রায় হাফ কিলোমিটার দুরে যাত্রীদের নামানো হয়। যাত্রীরা পায়ে হেটে যার যার গন্তব্যস্থলে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ভরা মৌসুমে রাক্ষুসী যমুনা নদীর হাকডাকে আমরা দিনরাত কাজে ব্যস্ত থাকি। ভয়ে থাকি কখন কোথায় ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু এখন পানির শ্রোত নেই, ভাঙ্গার চিন্তাও নেই। তবে ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলো সংস্কার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি কর্মকতা মো. আবু হানিফ জানান, যমুনার চরে হাজার হাজার বিঘা আবাদী জমি জেগে উঠে। কিন্তু নির্বারন করা খুব কঠিন। তবে গত বারের চেয়ে এবার অনেক বেশী জমি জেগে উঠেছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।