যুগের কথা প্রতিবেদক : ৯টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ জেলায় ৩২ লাখ মানুষের বসবাস। প্রতিনিয়তই হচ্ছে সিরাজগঞ্জ জেলার সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ।
নিয়োগ প্রক্রিয়া দেখেই মনে হচ্ছে সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের দায়িত্বই পেয়েছেন সিরাজগঞ্জ বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম? ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে জেলার সকল নিয়োগে নূরুল আলমের উপস্থিতি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি উপস্থিত হন ‘সকল পাতানো নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য’ এমন রেজওয়াজ এখন জেলাজুড়েই। তিনি কোন ক্ষমতার বলে সকল নিয়োগে উপস্থিত হন এটিই এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা প্রত্যেকটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির রয়েছে। কিন্তু স্ব-স্ব স্কুল ম্যানেজিং কমিটি মোটা অংকের অর্থ লেনদেন করে পছন্দের প্রার্থীদের আগে থেকেই ঠিক করে রাখেন। পাতানো নিয়োগ বাস্তবায়ন করতেই সরকারি প্রতিনিধি অর্থাৎ ডিজি প্রতিনিধি হিসেবে ঘুরে ফিরেই সিরাজগঞ্জ বিএল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ম্যানেজিং কমিটির মনোনীত প্রার্থীকেই মোটা অংকের অর্থ নিয়ে নিয়োগ দেওয়ার বন্দোবস্ত করতেই শুরু করেন নূরুল আলম শেখ।
অনেক সময়ে প্রার্থী চূড়ান্ত নিয়েই ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন ডিজি প্রতিনিধি নূরুল আলম। সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে স্বাক্ষর না করলে ম্যানেজিং কমিটি যেহেতু নিয়োগ দিতে পারবেন না তাই নূরুল আলমের কথায় ম্যানেজিং কমিটি রাজি হয়ে পাতানো নিয়োগ (অযোগ্য প্রার্থীকেই) নিয়োগ দিতে বাধৎ্য হচ্ছেন। আর এভাবে দরকষাকষি করে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ডিজি প্রতিনিধি নুরুল আলম। এতে একদিকে যেমন ভালো শিক্ষকের সংকট দেখা দিচ্ছে অন্যদিকে অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দেওয়ায় শিক্ষার মানও হচ্ছে নি¤œমুখী।
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, বিএল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং সালেহা ইসহাক সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে যৌথভাবে ডিজি প্রতিনিধি নির্ধারণ করা হতো। কিন্তু মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য শুধুমাত্র বিএল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হয়ে থাকেন। গত কয়েক বছরে তিননান্দিনা রশিদিয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, রায়গঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, রায়গঞ্জ উপজেলা সদর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সুবর্ণগাঁতী উচ্চ বিদ্যালয়সহ সিরাজগঞ্জ জেলার অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ হয়েছে সবগুলো নিয়োগই নূরুল আলম সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই নিয়োগ ছিল পাতানো বলে অভিযোগ রয়েছে।
এব্যাপারে রায়গঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, যেহেতু স্কুল ম্যানেজিং কমিটি পূর্ব থেকে প্রার্থী ঠিক করে রাখেন। তাই সরকারি ডিজি প্রতিনিধি যে টাকার দাবি করে থাকেন তার সেই দাবি মেনে নেওয়া হয়। কারণ তারা স্বাক্ষর না করলে নিয়োগ হবে না। নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য বিএল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল আলমকে অবিলম্বে অন্যত্র বদলি জরুরী হয়ে পড়েছে। তাকে অন্যত্র বদলী না করলে জেলায় পাতানো নিয়োগ কখনোই বন্ধ সম্ভব হবে না।
এ ব্যাপারে সালেহা ইসহাক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আফসার আলী বলেন, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতি হয় জানি। তাই আমি কোনো নিয়োগ পরীক্ষায় যাই না। গত ৫ বছরে মাত্র ৩টি নিয়োগ পরীক্ষায় আমি গিয়েছি।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম এর কাছে সকল স্কুলের নিয়োগে ডিজি’র প্রতিনিধি হওয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলার সকল স্কুলের নিয়োগে তিনটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ডিজি’র প্রতিনিধি হিসাবে রাখা হয় যার মধ্যে সালেহা, বি এল ও কাজীপুরের একটা স্কুলের প্রধান শিক্ষক। কিন্তু সালেহা স্কুল এর প্রধান শিক্ষক ডিজি’র প্রতিনিধি হিসাবে বেশি যেতে চায় না এবং কাজীপুর অনেক দুরে হয়ে যায় এছাড়াও আমার সাথে সকল স্কুলের স্যারদের পরিচয় এবং সম্পর্ক বেশি থাকায় আমাকে দায়িত্ব বেশি দেওয়া হয়। নিয়োগে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন প্রতিটি স্কুলের নিয়োগে টাকা পয়সার একটা সীমাবদ্ধতা থাকে এবং সেটি কমিটি করে থাকেন এখানে আমার কোন কিছু করার থাকে না।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শফী উল্লাহ বলেন, সালেহা ইসহাক সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় যেতে চায় না তাই নুরুল আলমকে পাঠানো হয়। তবে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করতে ১ লাখ টাকা নেওয়ার ব্যাপারে তার জানা নাই বলে জানান।