যুগের কথা প্রতিবেদক :
সিরাজগঞ্জে একজন মেডিকেল পড়ুয়া ছাত্রের ভাঙ্গা পায়ে ভুল অপারেশনসহ ভুল চিকিৎসা দিয়ে উজ্জল ভবিষ্যৎ জীবনের প্রায় দু’টি বছর বিনষ্ট ও অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করার ঘটনায় নর্থবেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও অর্থপেডিক্স সার্জন ডা.এইচএম আব্দুল ওয়াহিদ সাকিবের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে!
সাংবাদিক দুলাল উদ্দিন আহম্মেদ বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল ২০২২) সিরাজগঞ্জ সদর আমলী আদালতে ২৬৯ ও ২৭০ ধারা আইনে এমামলাটি দায়ের করেন। কিন্তু আদালত ওইদিন কোন আদেশ না দিয়ে অধিকতর শুনানির জন্য অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রে আদালতে প্রেরণ করলে আদালতের বিচারক বেলাল হোসেন আজ মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তপুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ওসি সিরাজগঞ্জ সদর থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ আদালতে এ ধারার মামলা এটিই প্রথম মামলা বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবী কামাল পারভেজ।
মামলা সুত্রে জানাগেছে,বিগত ২০২০ সালের ১৮ মে সলঙ্গা থানার বনবাড়ীয়া গ্রামের বাসিন্দা ও সলঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দুলাল উদ্দিন আহমেদ এর মেডিকেল পড়ুয়া ছেলে অলি আহমেদ পারভেজ মটরসাইকেল যোগে তার বর্তমান সিরাজগঞ্জ শহরের গোশালা বাসায় আসার পথে সকাল ১০টার দিকে সিরাজগঞ্জ সার্কিট হাউজের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয় এবং তার ডান পা’য়ের হাটুর উপরের হাঁড়ের মাঝখানে ভেঙ্গে যায়। এসময় মুমুর্ষু অবস্থায় তাকে সিরাজগঞ্জ নর্থবেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান এবং সহাকারী অধ্যাপক ও অর্থপেডিক্স সার্জন ডা.এএইচএম আব্দুল ওয়াহিদ সাকিবের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করান। সে মোতাবেক তিনি ২০ মে ২০২০ তারিখে তার পায়ের অপারেশন করেন। এদিকে অপারেশনের আগে ডা.এএইচএম আব্দুল ওয়াহিদ সাকিবের সাথে অপারেশনসহ আনুষাঙ্গিক খরচ এবং কোন পদ্ধতিতে অপারেশন হবে সে বিষয়টি চুড়ান্ত চুক্তি করা হয়। এসময় চুক্তির শর্তানুযায়ী ভাঙ্গা পা’য়ের হাঁড়ে নেইল লাগানোর কথা ছিল কিন্তু তা না লাগিয়ে হাঁড়ের ভাঙ্গা স্থানে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ ও জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃক নিষিদ্ধ ১৩টি নাটযুক্ত প্লেট লাগিয়ে দেয়। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় হলো ওই পা’য়ের ভাঙ্গা হাঁড়ে প্লেট লাগানোর জন্য হাঁড় ফুঁটো করার কাজে ব্যবহৃত ড্রিল মেশিনের নাটের মাথার অংশ হাঁড়ের ভিতর ভেঙ্গে যায়,যা পরবর্তীতে বের না করে বিষয়টি তিনি গোপন রেখে অপারেশন কাজ শেষ করেন।
অপরদিকে ডা.এএইচএম আব্দুল ওয়াহিদ সাকিব রোগীকে হাসপাতাল থেকে ২২/০৫/২০২০ তারিখে ছাড় করে দিলে তার পরামর্শ মোতাবেক তার নিকট ধারাবাহিকভাবে প্রথম পর্যায়ে ৭দিন,দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৫দিন এবং তৃতীয় পর্যায়ে ১ মাস পর পর করে দীর্ঘ ১৮ মাস এক্সরে ও চেকআপ করানো হয়। এরই একপর্যায়ে ১৮ মাস পর ভাঙ্গা হাঁড় জোড়া লেগেছে মর্মে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের ৮ তারিখে তিনি পুনরায় অর্থনৈতিক চুক্তি করে রোগীর ডান পায়ের সেই ভাঙ্গা স্থানে লাগানো প্লেট ১৩টি নাটসহ বের করেন ও হাসপাতালে ভর্তি রেখে ১৫ নভেম্বর ২০২১ তারিখে ছাড় করে দেন। কিন্তু হাঁড়ের ভিতরের সেই ড্রিল মেশিনের ভাঙ্গা নাটের মাথার অংশ বিশেষ তিনি প্লেটের সাথে বের না করে হাঁড়ের ভিতরেই রেখে দেন। যা পরবর্তীতে এক্সরে রিপোর্টে সনাক্ত হওয়ায় তিনি রোগীর বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন হাঁড় মজবুত রাখার স্বার্থে সাপোটিং হিসেবে নাট দেওয়া হয়েছে। এভাবে তার কথার প্রতি রোগীর স্বজনরা আস্থা রেখে প্লেট বের করার পর আবার ৪ মাস তার নিকট নিয়মিত চেকআপ ও পায়ের জোড়া লাগানো স্থানের এক্সরে করান। এসময় আড়াই মাস দুটি ক্রাচ এবং পরবর্তীতে ক্রাচ ছেড়ে ১ মাস ১টি লাঠির উপর ভর করে হাটা-চলার পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ডা.এএইচএম আব্দুল ওয়াহিদ সাকিব। এরই একপর্যায়ে চলতি ২০২২ সালের মার্চ মাসের ১৪ তারিখে শেষ এক্সরে ও চেকআপ করার পর ডা.এএইচএম আব্দুল ওয়াহিদ সাকিব রোগীকে ১৫ মার্চ ২২ থেকে লাঠি ছেড়ে স্বাধীনভাবে হাটা-চলার সিদ্ধান্ত দেন। তার সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক লাঠিছাড়া হাটা-চলা করতে গিয়েই ২৩ মার্চ ২০২২ তারিখ দুপুরে রোগী অলি আহমেদ পারভেজ দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় সেই ভাঙ্গা পা’য়ের জয়েন খুলে যায়। ওই দিনই তাকে জরুরীভাবে ঢাকা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পাশে মোহাম্মাদপুর কলেজ গেটের হুমায়ন রোডে অবস্থিত বিডিএম (প্রাইভেট) হাসপাতালে অধ্যাপক ডা.আব্দুস সালামের তত্ত্বাবধানে ৭০১ নং কেবিনে ভর্তি করা হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক ও পঙ্গু হাসপাতালের অর্থপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা. আব্দুস সালাম তার পায়ের এক্সরে করে এক্সরে রিপোর্ট দেখে বলেন পায়ের ভাঙ্গা স্থানে প্লেট লাগানোর কারণে ভাঙ্গা হাঁড় জোড়া না লাগায় জোড়া খুলে গেছে। একই সঙ্গে তিনি হাঁড়ের ভিতরে ড্রিল মেশিনের একটি নাটের অংশবিশেষ ভেঙ্গে থাকার বিষয়টিও সনাক্ত করেন। তবে পা’য়ের হাঁড়ের ভিতরে ভেঙ্গে থাকা ড্রিল মেশিনের ওই নাটের অংশবিশেষ বের না করা পর্যন্ত ভাঙ্গা স্থানে কোনক্রমেই নেইল লাগানো যাবেনা। ফলে অপারেশনের মাধ্যমে ভাঙ্গা নাটের অংশবিশেষ বের করে তারপর পায়ের ভাঙ্গা হাঁড়ে নেইল লাগাতে হবে বলে চিকিৎসক ও অর্থপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা.আব্দুস সালাম রোগীর স্বজনদের জানান এবং পা’টানা দিয়ে ৭২ ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রেখে ২৭ মার্চ ২০২২ তৃতীয়বার অপারেশনের মাধ্যমে সেই ড্রিল মেশিনের নাটের অংশবিশেষ বের করে ভাঙ্গা পা’য়ে নেইল লাগিয়েছেন। এদিকে সিরাজগঞ্জ নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অর্থপেডিক সার্জন ডা.এএইচএম আব্দুল ওয়াহিদ সাকিব কর্তৃক একে একে ২ বার ভুল অপারেশন ও ভুল পরামর্শ এবং পায়ের ভিতর হাঁড়ের ভিতর ড্রিল মেশিনের নাটের অংশবিশেষ রেখে দিয়ে একজন মেডিকেল পড়ুয়া ছাত্রের উজ্জল ভবিষ্যৎ জীবন থেকে দীর্ঘ প্রায় দু’টি বছর বিনষ্টসহ ৩ দফায় অপারেশনে যে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি সাধন করা হয়েছে সে বিষয়ে বাদী ন্যায় বিচার পেতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ডা.এএইচএম আব্দুল ওয়াহিদ সাকিবের বিরুদ্ধে ২৬৯ ও ২৭০ ধারা আইনে মামলাটি দায়ের করেছেন।