বগুড়া সদরের আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা বিলকিস বেগম। একসময় যার নুন আনতে পান্তা ফুরাতো সেই বিলকিস এখন হুইল চেয়ারে ভর করেও স্বপ্ন দেখছেন ইতিবাচক আগামীর। প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে হতে চান সাবলম্বী। শুধু বিলকিস নয় তার মতো বগুড়ার ৩টি উপজেলা বগুড়া সদর, কাহালু ও সোনাতলার এমন ৭০ জন সম্ভাবনাময় নারীর জীবনমান উন্নয়নে তাদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করে যাওয়া সংস্থা ডাব্লিউডিডিএফ।
ইরো- এশিয়া প্যাসিফিক দাতা সংস্থার অধীনে উইম্যান গেইনিং গ্রাউন্ড (ডাব্লিউজিজি) প্রকল্পের অর্থ সহায়তায় সংস্থাটি বগুড়ার ৭০ জন নারীকে সর্বমোট ১০ লক্ষ টাকা সমমান মূল্যের আয়বর্ধক সামগ্রী প্রদান করছেন।
ডাব্লিউডিডিএফ এ নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টির সভাপতিত্বে ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় মঙ্গলবার বিকেলে প্রথম ধাপে বগুড়ার সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে সদরের ৩০ জন প্রতিবন্ধী নারী ও মেয়ে শিশুদের মাঝে প্রধান অতিথি হিসেবে আয়বর্ধক সামগ্রী তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা পারভীন।
এসময় তিনি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে ডাব্লিউডিডিএফ বগুড়া সদরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় সফলতার সাথে প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়ন ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন। নারীদের স্বাবলম্বীকরণে সরকার নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে ডব্লিউডিডিএফ যে ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে আয়োজক সংস্থার মাধ্যমে আজ সদরের ৮ জন নারীকে সেলাই মেশিন, ৪ জনকে কাপড়ের ব্যবসা করার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, ১১ জনকে মুদি দোকানের সামগ্রী, ১ জনকে আচারের ব্যবসা, ১ জনকে বাদাম-বুট বিক্রির উপকরণ, ২ জনকে পেঁয়াজুর দোকান, ১ জনকে ঝাল মুড়ির দোকানের জন্যে প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং ২ জনকে এন্ট্রিক্স এর ব্যবসার জন্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হচ্ছে। ইতিবাচক আগামীর স্বপ্ন নিয়ে যে নারীদের আজ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে ফিরোজা পারভীন প্রত্যেককে শুভকামনা জানিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে সর্বদা তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল মোমিন। এছাড়াও অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন আয়োজক সংস্থার সহ-সহায়ক সমন্বয়কারী শারমিন আক্তার দোলন, প্রকল্প সমন্বয়কারী মাহফুজা মুক্তা, বগুড়া শাখা সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল, উপজেলা সমন্বয়কারী গোলাম কিবরিয়া ও ফারহানা হেনা প্রমুখ।
নারীদের স্বাবলম্বীকরণে ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে ডাব্লিউডিডিএফ এর নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি বলেন, নগদ অর্থের পরিবর্তে আয়বর্ধক সামগ্রী প্রদানের মাধ্যমে তারা প্রত্যাশা করেন উপকারভোগী নারীদের জীবন মান উন্নয়ন হবে এবং তারা সমাজের মূল স্রোতধারায় একীভূত হবে। নিজেদের দারিদ্রতা বিমোচনের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে এই নারীরা এমন স্বপ্ন দেখছেন তারা। সদরের ৩০ জন ছাড়াও কাহালুতে ১৯ এবং সোনাতলা উপজেলায় ২১ জনকে এই আয়বর্ধক সামগ্রী প্রদান করা হবে।