হুমায়ুন কবির সুমন: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, হিন্দুদের একটি অংশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার পরাজিত শক্তি দেশে ষড়যন্ত্র করছে। আওয়ামীলীগের পাতানো সাম্প্রদায়িক উসকানিতে কেউ পা দেবেন না।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে রায়গঞ্জ-তাড়াশ ও সলঙ্গা থানা বিএনপির আয়োজিত নিমগাছি কলেজ মাঠে ঐতিহাসিক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজকে আমার এখানে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেয়ার কথা ছিলনা। আজ থেকে দুই বছর আগে যখন আমি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করছি তখন শুনলাম খুনি হাসিনার আদালত আমাকে ৯ বছরের সাজা দিয়েছে। আমি তখনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তার রায় আমি মানিনা, হাসিনার জেলে আমি যাব না। তাই জেলে যাওয়ার চেয়ে আমি বিদেশে থেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবার সাথে যোগাযোগ রাখবো, আন্দোলন পরিচালনা করব, আমি তাই করেছি।
দেশ ছেড়ে পালিয়ে বিদেশে বসে শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের সজাগ থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যুদ্ধ কিন্তু শেষ হায় নাই। আমরা কিন্তু ক্ষমতায় আসি নাই, ক্ষমতায় অর্ন্তবতীকালীন সরকার। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাই বিএনপির ক্ষমতায় আসার একমাত্র পথ হলো জনগণের ভোট। একারনে আপনারা দেখেছেন কীভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপরে নির্যাতন করা হয়েছে। সারা বাংলাদেশের মানুষ হাসিনার কয়েদি হয়ে গিয়েছিল। ১৬ বছর লড়াই করার পরে আজ আমরা একটা মুক্ত আকাশ দেখতে পাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করতে চাই, আওয়ামী লীগ যতোই ষড়যন্ত্র করুক না কেন আর তারা দেশের ক্ষতি করতে পারবে না।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আরও বলেন, তারা খালেদা জিয়াকে টুপ করে নদীতে ফেলে দিতে চেয়েছিল। আজকে আপনি কোথায়। যাদেরকে দেশ দিয়ে দিয়েছিলেন আজ তাদের কাছে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আজ যদি সাঈদ-মুগ্ধদের, অন্যান্য শহীদদের রক্তে রাজপথ লাল না হতো, পিচ্ছিল না হতো তাহলে আজ এইদিন দেখতে হতো না। আজ ১২ বছর পরে খালেদা জিয়া সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠানে গিয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনী তাকে প্রধানমন্ত্রীর মতো সম্মান দিয়েছেন স্যালুটের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, আমি ১৬ বছর আগে যে কর্মী দেখতাম এখন আরও নতুন নতুন কচি কচি মুখ দেখি। আমি ভেবেছিলাম আমাদের মনে হয় নতুন কর্মী নাই কিন্তু অসংখ্য নতুন মুখ আমাদের কর্মী। এরাই এক সময় দেশের হাল ধরবে, আওয়ামী লীগকে শায়েস্তা করবে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না। এ জন্য তাকে পালিয়ে গিয়ে অন্যের ভাত খেতে হচ্ছে। আর আমাদের নেত্রী ঠিকই দেশে নি:শ্বাস নিচ্ছেন।
টুকু বলেন, বিএনপি জনগণের কাছে ওয়াদা করেছে আমরা জনগণকে নিয়ে ক্ষমতায় আসবো, তারা বলেছে এই দেশকে সংস্কার করতে হবে। আ.লীগ লুটপাট করে দেশটা শেষ করে দিয়েছে তাই সংস্কার করা খুব দরকার। এজন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি, আর সেই ৩১ দফার নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের তারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জনগণের উদ্দ্যেশে সাবেক প্রতিমন্ত্রী বলেন, একসময় জিয়াউর রহমান যেমন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক তেমনই তারেক রহমানও দেশের মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। একসময় তিনিই হবেন বাংলাদেশের পথ প্রদর্শক। তাই বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বলছি, আওয়ামী লীগ হলো সাপ। তাদের থেকে সাবধানে থাকতে হবে, তাদের সাথে চলাফেরা চলবে না। তাদের সব হারাম, তাই তাদের হারাম কেও খাবেন না।
রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শামছুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ-রায়গঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান তালুকদার, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, জেলা বিএনপির যুগ্ন সম্পাদক ও সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হারুন অর রশীদ খান হাসান, রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) দুলাল হোসেন খান, তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল রহমান টুটুল ও সলঙ্গা থানা বিএনপির সভাপিত মতিয়ার রহমান সরকার, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম সরকার, তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সভাপতি স.ম আফসার আলী, রায়গঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি হাতেম আলী সুজন, তাড়াশ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক তপন কুমার গোস্বামী। এসময় স্মরণ সভায় জেলা ও উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।