নেহাল আহম্মেদ প্রান্ত : স্বাধীনতা স্তম্ভ। যেখানে জড়িয়ে থাকে মুক্তিযুদ্ধের অনেক ইতিহাস। যেটা বহন করে মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতিবিজরিত নিদর্শন। অথচ সেই স্বাধীনতা মঞ্চে/স্তম্ভের/ চত্বরের দেয়ালেই করছে অনায়াসে প্রগ্রাব। অনেকে আবার জুতা পায়ে উঠছে স্বাধীনতা স্তম্ভের মূল বেদীতে কেউবা ব্যস্ত সেলফি তোলায়। এমনই প্রতিনিয়ত ঘটনা ঘটছে বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারে নিহত শহীদদের স্মরণে স্থাপিত স্বাধীনতা মঞ্চে/স্তম্ভের/ চত্বরে। এর জন্য দায়ী কে? সচেতনতা নাকি, কঠোর পদক্ষেপ?
জানা যায়, উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও রয়েছে এই শহরে। ১৯৭১ সালে প্রায় ২৫ হাজার বিহারির বসবাস ছিল এই শহরে।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে বিহারিরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বাঙালী নিধন কার্যক্রম শুরু করে। সেই সময় বাঙ্গালীদের উপর শুরু হয় নিপীড়ন নির্যাতন। ১৯৭১ সালের শেষ পযর্ন্ত তাদের হত্যাযঙ্গের ভয়ে ভিত না হয়ে প্রতিবাদী হয়ে দাঁড়ায় বাঙ্গালীরা। যার ফলে নিহত হয় উভয় পক্ষের লোকজন। সেই সময় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকবাহিনী বিহারি হত্যা কান্ডের প্রতিশোধ হিসাবে ব্যাপক হত্যাযঙ্গ চালায় বাঙ্গালীদের উপর। প্রান যায় অনেক হিন্দু, মুসলমানসহ নানা ধর্মের মানুষের। মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত সেই শহীদদের জন্য সান্তাহারে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয় ২০১৫ সালে। আর সেই স্বাধীনতা স্তম্ভের মূল বেদিতে জুতা পায়ে উঠে করছে ঘোরাঘুরি, অনেকে ব্যস্ত থাকে ছবি তোলা নিয়ে, কেউবা ব্যস্ত খোশগল্পে। জুতা পায়ে উঠা নিষেধ থাকলেও মানছে না দর্শনার্থীরা। এছাড়া স্তম্ভের দেওয়ালেই প্রগ্রাব করছে অনেকে। যার কারণে দূর্গন্ধে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে আশেপাশে। পাশাপাশি স্বাধীনতা চত্বরের যেখানে সেখানে মোটরসাইকেল পার্কিং করে রাখা হচ্ছে যার কারণে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে স্বাধীনতা স্তম্ভের। বড়োই অভাব আমাদের সচেতনতার!! এমনটাই ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে বলছেন সচেতন মহল।
এ বিষয়ে স্বাধীনতা স্তম্ভের ডিজাইনার সাজেদুল ইসলাম চম্পা বলেন, স্বাধীনতা আমাদের গৌরবের বিষয়, আমাদের অহংকার আর স্বাধীনতা স্তম্ভ তারই প্রতীক। এই স্বাধীনতা চত্বরে জুতা পায়ে ওঠা নিয়ে এর আগেও আমি বহুবার মানুষদের সচেতন করার চেষ্টা করেছি। তিনি ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে আরও বলেন, লজ্জায় আমার মাথা অবনত হয়ে আসে। আমি স্তম্ভিত, লজ্জিত হই। মনে মনে ভাবি কাদের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করলো? আর কাদের জন্যই বা স্বাধীনতার এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করলাম।
এ ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম বলেন, স্বাধীনতা স্তম্ভে জুতা পায়ে উঠা আমাদের কারোই কাম্য নয়। এ বিষয়ে মানুষজনদের আরও সচেতন করতে হবে। সর্বোপরি নিজেদেরকে আরও সচেতন হতে হবে। এছাড়া এটি বন্ধের জন্য সকলকে এক সাথে এগিয়ে আসতে হবে।