অবৈধ কারেন্ট জাল প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা বিভিন্ন হাটে বাজারে। সম্প্রতি ব্যাপক বৃষ্টি ও জোয়ারে এলাকার হাজার হাজার মাছের ঘের প্লাবিত হওয়ার প্রেক্ষিতে নদী, খালে মাছ চলে এসেছে। এই অবস্থায় মাছ শিকারিদের মধ্যে কারেন্ট জাল কেনার ধুম পড়ে গেছে। সরকারিভাবে যেখানে জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হচ্ছে।
সেখানে ব্যবসায়ীরা অবৈধ কারেন্ট জাল বিক্রি করছে প্রকাশ্যে। মাছের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই জাল আইনে নিষিদ্ধ। কিন্তু সেই আইন মানছে না কেউ।
কারেন্ট জাল একধরনের বিশেষ জাল, যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘মনোফিলামেন্ট ফিশিং নেট’।
এই জালের বিশেষ সুতা অতিসূক্ষ্ম। যা জলাশয়ে পাতার পরে সাধারণত মাছেরা দেখতে পায় না এবং বিদ্যুতের মতো সকল মাছ আকর্ষিত হয়ে ফাঁসে আটকে যায়। এজন্য এর নাম ‘কারেন্ট জাল’।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন ) উপজেলা বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রকাশ্যে অবৈধ কারেন্ট জাল বিক্রি করছে দোকানিরা।
বিক্রেতারা জানান, প্রতিকেজি কারেন্ট জাল প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। উল্লাপারায় বেশির ভাগ কারেন্ট জাল উৎপাদিত হয়। বিভিন্ন বাজার হতে কারেন্ট জাল তারা আনেন বলে জানান। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে এই অবৈধ জাল বিক্রি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, কারেন্ট জালে ছোট-বড় সকল মাছ ধরা পড়ে।
তার কিছু যাচ্ছে বাজারে, বাকি মাছ যাচ্ছে শিকারিদের কড়াইয়ে। কড়াইয়ের গরম তেলে ভাজা হয় ক্ষুদে মাছ। চটচলদি তা খেয়ে শিকারিরা আবার মাছ ধরার উদ্দেশ্যে জলাশয়ে ছুটছে। সরকারি নিয়মে ৯ সেন্টিমিটারের ছোট মাছ ধরা নিষেধ। কিন্তু এখানে কোনো নিময় মানা হচ্ছে না। এসব জাল দিয়ে জেলেরা বিভিন্ন নদী-খাল-বিলে দেশি প্রজাতির ডিমওয়ালা ও জলাশয়ে সদ্য অবমুক্ত করা পোনা মাছ নিধন করছেন।
বর্ষার শুরু থেকে এসব জাল দিয়ে মাছ ধরা শুরু হয়েছে। বন্যায় পানি বৃদ্ধির পর মাছ ধরার পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। মাছ শিকারিরা নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার করে নিজেদের অজান্তেই জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলছেন বলে তারা অভিযোগ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা দাবি করেন, বাজারে কারেন্ট জালের সহজলভ্যতা বন্ধ করতে হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে সরকারের জারি করা মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইনের ৪ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কারেন্ট জালের উৎপাদন, বুনন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ, বহন, মালিক বা ব্যবহার করতে পারবেন না। আইন ভঙ্গকারী পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা এক থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড দণ্ডিত হবেন। এছাড়া, মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৮৫ এর বিধি-১২ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার মাছ ধরার ক্ষেত্রে, ৪.৫ সেন্টিমিটার বা তার কম ব্যাস বা দৈর্ঘ্যরে ফাঁস বিশিষ্ট জাল বা অনুরূপ ফাঁস বিশিষ্ট অন্য যেকোনো জালের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার মো. মজগুল আজাদ জানান, কারেন্ট জাল বিক্রির বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এব্যাপারে অচিরেই প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।