ঢাকাসোমবার , ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আবহাওয়া
  3. আমাদের পরিবার
  4. আর্ন্তজাতিক
  5. ইসলামী জীবন
  6. এনায়েতপুর
  7. কক্সবাজার
  8. করোনা আপডেট
  9. খেলাধুলা
  10. চাকরি-বাকরি
  11. জাতীয়
  12. নাগরিক সংবাদ
  13. পাঁচমিশালি
  14. বরিশাল বিভাগ
  15. বাংলাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শাহজাদপুরে ছিন্নমূল শ’তাধিক নারীর ভাগ্য পরিবর্তন

যুগের কথা ডেস্ক
নভেম্বর ৫, ২০২১ ৮:১১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

যুগের কথা প্রতিবেদক : যমুনার ভাঙনে নিঃস্ব শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের দুর্গম হাটপাঁচিল গ্রামের শ’তাধিক উদ্বাস্তু ছিন্নমূল নারীরা আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নানা পালা-পার্বনে, উৎসবে, গ্রামীণ মেলায় বহুল প্রচলিত মুখরোচক খাবার ঝুরি তৈরি করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। ঝুরি প্রস্তুত ও বিক্রি করে হাটপাঁচিল গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা, অশীতিপর বৃদ্ধা, দুস্থ, অসহায়, ছিন্নমূল, আত্মপ্রত্যয়ী কর্মঠ এসব নারীরা পরনীর্ভরশীলতার নাগপাশ ডিঙিয়ে স্ব-নীর্ভর ও স্বাবলম্বী হয়েছেন।

কর্মশূণ্যপ্রায় হাটপাঁচিল গ্রামের অসহায় ওইসব নারীদের ব্যবসায়ীক প্রবৃদ্ধি ও সফলতা দেখে যমুনা অধ্যুষিত পার্শ্ববর্তী পল্লীগ্রামের অনেক সহায়-সম্বলহীন নারীরাও ঝুরি তৈরির কাজে ঝুঁকছেন । হাটপাঁচিল গ্রামের এক সময়ের চির অবহেলিত, চির পতিত, চির অপাংক্তেয় ভাগ্যবিড়ম্বিত ওইসব নারীদের- অতীতে যাদের বুক ফাঁটলেও মুখ ফোঁটেনি; যাদের বিচারের বাণী কেবল নিরবে নিভৃতেই কেঁদেছে; তাদের সাফল্যগাথা স্ব-নির্ভর জীবনকাহিনী শুনতে অনেকটা কল্পকথা মনে হলেও বাস্তবতা অনেক সময় কঠিন কল্পনাকেও হার মানাতে পারে- এমনই জ্বাজল্যমান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দুগর্ম হাটপাঁচিল গ্রামের শ’তাধিক ঝুরি প্রস্তুতকারক স্বাবলম্বী নারীরা।

রোববার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিন হাটপাঁচিল গ্রাম পরিদর্শনকালে ওই গ্রামের বয়োবৃদ্ধা মইতন, সুফিয়া, মমতাসহ বেশ কয়েকজন ঝুরি প্রস্তুতকারক নারীরা জানান, ‘তাদের বাড়িঘর, জমিজমা, সহায়-সম্বল তিনবার, চারবার বা তারও বেশিবার রাক্ষুসী যমুনার কড়াল গ্রাসে বিলীন হওয়ায় কালের বিবর্তনে সময়ের পরিধিতে তারা উদ্বাস্তু ও দুস্থে পরিণত হয়েছিলো। যমুনার তীরবর্তী এ গ্রামটি বালুর চরাঞ্চল হওয়ায় এখানে কোন ফসলের আবাদওহয়না। পাশের গ্রামগুলোতেও জীবীকা নির্বাহের জন্য উল্লেখযোগ্য কোন কাজও সচারচার পাওয়া যায়না। যমুনার ভাঙনে তাদের মতো কর্মহীন নারীর দিন কাটছিলো অতিকষ্টে, অর্ধাহারে, অনাহারে। দিনে দিনে যমুনায় সব হারিয়ে একে এক তারা পথের ভিখারীতে পরিণত হয়েছিলো।

এমতবস্থায় নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের যোগান দেয়াটাই তাদের জন্য হয়ে উঠেছিলো অন্তরায় ও কষ্টসাধ্য, রীতিমতো অসাধ্য ব্যাপার! এর মধ্যেও ‘মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ!’এর মতোই পুরুষপ্রধান পরিবারের অনেক পুরুষ তাদের স্ত্রী পরিজন ফেলে ঘর বেঁধে বছরের পর বছর অন্যত্র অবস্থান করায় স্বামী পরিত্যাক্তা অনেক নারী ও পরিজনের জীবন-জীবীকা ধুঁকে ধুঁকে নিদারুণ কষ্টেই চলছিলো! জীবীকার তাগিদে তারা ঝুরি তৈরির ও বিক্রির কাজ বেছে নেয়। এরপরেই তাদের জীবনে দিনবদলের পালা শুরু হয়। ঝুঁরি বিক্রি করে তারা লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন।

এরপর থেকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি তাদের।এভাবেই তাদের মতো হাটপাঁচিল গ্রামের শ’তাধিক নারীরা ঝুরি তৈরির কাজ করে বর্তমানে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছেন। নারী হয়েও আয় করে পরিবারের জীবীকা নির্বাহ করার পাশাপাশি অনেকেই তাদের সন্তান-সন্তানাদিকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন, শিক্ষিত করে তুলতে। আবার অনেকেই ঝুরি তৈরির পাশাপাশি বাড়িতে গরু-বাছুর, ভেড়া-ছাগল প্রতিপালন করে অধিক মুনাফা আয় করছেন।

এ গ্রামের ঝুরি প্রস্তুতকারক নারীরা আরও জানান, ‘দিনে একজন নারী তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রায় ১ মণ ঝুরি তৈরি করতে পারছেন যার বর্তমান বাজার মূল্য মণপ্রতি প্রায় ৩৫’শ টাকা। কেজিপ্রতি তারা ঝুরি বিক্রি করছেন ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। এতে কেজিতে তাদের ১০ থেকে ১৫ টাকা নীট মুনাফা হচ্ছে যা মণপ্রতি হিসাবে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৩’শ ৮০ টাকা থেকে প্রায় ৫’শ টাকায়। শাহজাদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের তৈরি ঝুরির বেশ চাহিদা থাকায় বিক্রিতে কোন বেগ পোহাতেও হচ্ছেনা। আবার ঝুরি প্রস্তুতে হচ্ছেনা তাদের বাড়তি কোন খরচ । ঝুরি প্রস্তুতের প্রধান কাঁচামাল আলা চালের দাম বাজারে একটু বৃদ্ধি পাওয়ায় অতীতের তুলনায় বর্তমানে তাদের লাভ একটু কম হচ্ছে।

হাটপাঁচিল গ্রামের ঝুরি প্রস্তুতকারক কর্মঠ নারীরা আরও জানান,‘প্রথমে আলো (আলা) চাউল ড্যাগের (পাতিল) মইধ্যে সিদ্ধ কইর‌্যা বৈঠা দিয়্যা ঘুঁইট্যা ঘুঁইট্যা দলা বানাইয়্যা ঝাঁঝুর দিয়ে ঝাঁইড়্যা কাঁচা ঝুরি বানাই। পরে হেই ঝুরি রোইদে শুঁকাইয়্যা গরম বালি দিয়্যা ভাঁজি। ভাঁজা ঝুরি বেইচ্যা যা থাকে তা দিয়্যা ছাওয়ালপালগরে পাইলব্যার পাইরতেছি।’ তাদের ভাষ্যমতে, ‘ঝুরি বিক্রির নীট মুনাফা হিসেবে যা থাকছে তা দিয়ে গ্রামের শ’তাধিক দুস্থ নারী পরিবার তাদের পরিজন নিয়ে বর্তমানে বেশ ভালোভাবেই দিন অতিবাহিত করছেন ও নিজেদের ভাগ্যকে সুপ্রসন্ন করছেন।লেখাপড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে কোমলমতিরাও ঝুরি তৈরির কাজে বড়দের সহযোগীতা করছে। সবমিলিয়ে তাদের মতো এক সময়ের পথের ভিখারীতে পরিণত শ’তাধিক স্বামী পরিত্যাক্তা, অশীতিপর, দুস্থ ও অসহায় নারীরা ঝুরি তৈরি করে দারিদ্রতা দূর করে হয়েছেন স্বাবলম্বী; সেইসাথে ঝুরি তৈরি করে তারা দেশের ছিন্নমূল নারীদের ভাগ্যবদলে সম্ভাবনাময়, সাফল্যমন্ডিত ও গৌরবোজ্জ্বল এক অধ্যায় সূচিত করেছেন!’

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রবলা, প্রমত্তা, প্রগলভা, উত্তাল, আগ্রাসিনী যমুনার কড়াল গ্রাসে সহায় সম্বল সব হারিয়ে এক সময়ের উদ্বাস্তুতে পরিণত শাহজাদপুরের হাটপাঁচিল গ্রামের রোজিনা, আছমা, সুফিয়া, শেফালি, গোলে বেগমসহ এ গ্রামের শ’তাধিক নারীরা ঝুরি বিক্রি করে অভাবকে পরাজিত করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। এ গ্রামের দুস্থ অনেক নারীদের এক সময়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটলেও, ঝুরি তৈরি করে বিক্রির পর থেকে তাদের অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশা দূরীভূত হতে শুরু করে। বর্তমানে হাটপাঁচিল গ্রামের শ’তাধিক নারীরা ঝুরি বিক্রি করে জনপ্রতি প্রতি মাসে ২০/২৫ হাজার টাকা আয় করছেন। তাদের সাফল্যগাথা কর্মজীবন দেখে পার্শ্ববর্তী গ্রামের অনেক নারীরাও ঝুরি তৈরির কাজে ঝুঁকছেন। হাটপাঁচিল গ্রাম পরিদর্শনকালে কথা হয় পাইকারি ঝুরি ব্যবসায়ী হারেছের সাথে।
আলাপকালে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ‘নানা পালা-পার্বনে, উৎসবে, গ্রামীণ মেলায় আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মুখরোচক খাবার ঝুরির দেশব্যাপী ব্যাপক চাহিদা ও কদর রয়েছে। ফলে ঝুরি বিক্রিতে না নারীদের না তাদের মতো পাইকারদের বেগ পোহাতে হচ্ছে। লাভও যা হচ্ছে তা একেবারেই মন্দ না!

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হাটপাচিল গ্রামের নারীরা বেশ কর্মঠ। তারা নিজ উদ্যোগে এ কাজ করে বেশ এগিয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাবে এ গ্রামের নারীরা আবহমান গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঝুরি শিল্পকে আজও একটি সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্পে পরিণত করতে পারেনি। সরকারি-বেসরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হলে হাটপাঁচিল গ্রামের নারীরা এ শিল্পটিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠিত শিল্পে পরিণত করতে সক্ষম হবেন।

 

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।